এখন সময় : আট পুলিশ কর্মী খুনের ঘটনার ঠিক আট দিনের মাথায় গ্রেফতার করা হল উত্তরপ্রদেশের কুখ্যাত দুষ্কৃতী বিকাশ দুবেকে। বৃহস্পতিবার মধ্যপ্রদেশ থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সূত্রের খবর, বিকাশ দুবেকে ধরার জন্য তিন রাজ্যে নিজেদের জাল বিছিয়েছিল পুলিশ। অবশেষে মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনীর একটি মন্দির থেকে গ্রেফতার করা হয় এই কুখ্যার গ্যাংস্টারকে। একই সময়ে তার আরও দুই সঙ্গীকে দুটি আলাদা এনকাউন্টারে মারে পুলিশ। গতকালই এনকাউন্টারে খতম হয়েছিল বিকাশের ছায়াসঙ্গী অমর দুবে।
পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা নাগাদ উজ্জয়িনীর একটি মন্দিরের কাছে দেখা যায় বিকাশকে। এক স্থানীয় দোকানদার বিকাশকে দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। যখন বিকাশ মন্দির থেকে বেরাতে যায়, তখন নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে প্রশ্ন করেন। সেই সময় বিকাশ একটা নকল আইডেন্টিটি কার্ড দেখিয়ে সেখান থেকে পালাতে যায়। নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে তার ধ্বস্তাধস্তি হয়। নিরাপত্তারক্ষীরাই তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বিকাশের গ্রামের বাড়িতে হানা দেন উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ৫০ কর্মী। খুন, অপহরণ ও আরও অনেক দুষ্কর্মের অন্তত ৬০টি মামলা রয়েছে এই বিকাশের বিরুদ্ধে। এই কর্মীদের নেতৃত্বে ছিলেন ডেপুটি পুলিশ সুপার দেবেন্দ্র কুমার মিশ্র। কিন্তু আগে থেকেই এই পুলিশকর্মীদের আসার খবর পেয়ে গিয়েছিল বিকাশ। তাই পুলিশ আসার আগেই তৈরি ছিল তার দল। পুলিশ এলাকায় পৌঁছতেই এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে তারা। এই গুলিকে আট পুলিশকর্মী শহিদ হন। গুরুতর আহত হন আরও সাত কর্মী। মারা যান ডিএসপি দেবেন্দ্রও।
এই ঘটনার পরেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় বিকাশ ও তার সঙ্গীরা। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের তরফে এসটিএফের একটি দল তৈরি করে তল্লাশি শুরু হয়। এই দলে ৪০টি থানার পুলিশকর্মীদের রাখা হয়। উত্তরপ্রদেশ ছাড়াও হিমাচল প্রদেশ, দিল্লি ও মধ্যপ্রদেশে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। বিকাশের মাথার দাম রাখা হয় ৫ লক্ষ টাকা।
গত শনিবার বিকাশের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী দয়াশঙ্কর অগ্নিহোত্রীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কানপুরের কল্যাণপুর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে পায়ে গুলি লাগে দয়াশঙ্করের। তারপরেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। রবিবার জেরায় পুলিশকে দয়াশঙ্কর জানায়, পুলিশের মধ্যে থেকেই কেউ বিকাশকে ফোন করে পুলিশের হানা দেওয়ার খবর দিয়েছিল। তারপরেই তিন পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়।
বুধবার সকালে হিমাচল প্রদেশের হামিরপুর জেলার মোদাহা থানা এলাকায় বিকাশের ছায়াসঙ্গী অমর দুবেকে খতম করে পুলিশ। আর্তারা গ্রামে লুকিয়ে ছিল অমর। সেখানে হানা দেয় এসটিএফ। পুলিশকে দেখে অমর পালানোর চেষ্টা করলে শুরু হয় এনকাউন্টার। এই এনকাউন্টারে সে নিহত হয়।
পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতে এসটিএফের কাছে একটি সিসিটিভি ফুটেজ আসে। সেখানে দেখা যায়, বিকাশ দুবের মতো দেখতে এক ব্যক্তি হরিয়ানার এক হোটেলে রয়েছে। তার সঙ্গে আরও দু’জন রয়েছে। এই খবর পেয়ে ফরিদাবাদ ক্রাইম ব্রাঞ্চের সাহায্যে সেখানে হানা দেয় পুলিশ। যদিও তার আগেই বিকাশ পালিয়ে যায়।
বিকাশ পালিয়ে গেলেও সেখান থেকে প্রভাত নামের বিকাশের এক সঙ্গীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই প্রভাতকে কানপুরে নিয়ে আসার সময় পুলিশের ভ্যানের টায়ার পাংচার হয়। সেই সুযোগে পুলিশের বন্দুক ছিনিয়ে প্রভাত পালানোর চেষ্টা করলে এনকাউন্টারে তাকে খতম করে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকালেই লখনউ থেকে ২২০ কিলোমিটার দূরে এটাওয়াতে পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে বিকাশের আর এক সঙ্গী প্রবীণ খতম হয়। এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, এভাবে একের পর এক সঙ্গীকে হারিয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিল বিকাশ। বাকিরাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছিল। তাই মন্দিরে যাওয়ার সময় বিকাশের কোনও সঙ্গী সঙ্গে ছিল না। তাই সহজেই গ্রেফতার করা সম্ভব হয় বিকাশকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন