একটা নয়, একের পর এক।
এক জন নন, অনেকে।
একবার নয়, বারবার।
গতকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় উঠে এসেছে পরপর বিস্ফোরক অভিযোগ যৌন হেনস্থার। একাধিক তরুণীর স্ক্রিনশটে প্রমাণ মিলছে, সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পড়ুয়াদের আপত্তিকর প্রস্তাব দিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার রাজারহাট নিউ টাউনের সিপিএম পার্টি সদস্য এবং ডিওয়াইএফআই জেলা কমিটির সদস্য ঋদ্ধ চৌধুরী।
প্রথম অভিযোগটি আসে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পড়ুয়ার থেকে। সম্প্রতি ফেসবুকে একটি কথোপকথনের অংশ প্রকাশ করে তিনি অভিযোগ করেন, পরীক্ষার বিষয়ে সাহায্য চাইতে প্রেসিডেন্সি চত্বরে ‘বড়দা’ নামে পরিচিত ঋদ্ধর সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিনিময়ে তাঁর কাছ থেকে ‘হট’ ছবি দাবি করেন ঋদ্ধ! এমনকি ওই ছাত্রী আপত্তি করলেও অভিযুক্ত ঋদ্ধ চৌধুরী বারবারই চাইতে থাকেন ছবি। ভিডিও চ্যাটিং অ্যাপ ডাউনলোড করার জন্য জোরাজুরিও করেন। বলাই বাহুল্য, এ কেবল অভিযোগ নয়, ঋদ্ধর এই বারংবার কুপ্রস্তাব অভিযোগকারিণীর পোস্ট করা স্ক্রিনশটে জ্বাজ্জ্বল্যমান।
এ তো গেল প্রথম অভিযোগ। আরও এক পড়ুয়ার পোস্ট করা স্ক্রিনশটে দেখা গেছে, বিকৃত যৌন ইঙ্গিত করছেন ঋদ্ধ, এবং কার্ল মার্ক্সের নামে শপথ নিয়ে অভিযোগকারিণীকে আশ্বস্ত করছেন, সমস্ত কথোপকথন ডিলিট করে দেওয়া হবে। আবার কোথাও অকপটে ঋদ্ধ চৌধুরী লিখেছেন, তিনি নিজে সিঙ্গেল, তাই এটাই তাঁর কাছে ‘মস্তি’র টাইম।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এমন অভিযোগ এই প্রথম নয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় বারবারই নিন্দার ঝড় উঠেছে কলেজের ‘দাদা’দের এই অশ্লীলতার বিরুদ্ধে। তবে কোনও বারই মিডিয়া ট্রায়াল বা বড়জোর বাধ্যতামূলক ইস্তফা ছাড়া অন্য কোনও রকম শাস্তি হয়নি কারওই।
এবার অবশ্য একের পর এক অভিযোগ সোশ্যাল মিডিয়ায় সামনে আসতেই ক্ষমা চাওয়ার রাস্তায় হেঁটেছেন ঋদ্ধ চৌধুরী। নিজের সব দোষ ও ভুলের দায় স্বীকার করে নিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন তিনি। এই ঘটনাবলি থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে সংশোধিত করে, প্রকৃত বামপন্থী হিসেবে গড়ে তোলার ইচ্ছেও প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এই ক্ষমাপ্রার্থনায় পাল্টা আক্রমণ ও ব্যঙ্গই বেড়েছে।
এই ক্ষমাপ্রার্থনার পরে অবশ্য ফেসবুকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ঋদ্ধ চৌধুরীর প্রোফাইল। সম্ভবত প্রোফাইল ডিঅ্যাক্টিভেট করে দিয়েছেন তিনি।
জানা যাচ্ছে, ঋদ্ধ এক তাবড় সিপিএম নেতার ঘনিষ্ঠ। সেই নেতার ছেলের সঙ্গেই তাঁর সমস্ত দহরম-মহরম। যুব নেতার এমন কাণ্ডে যেমন ফাঁপরে পড়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম, তেমন আবার অনেকে বলছেন এটা তো হওয়ারই ছিল। ঋদ্ধকে নিয়ে কার্যত দ্বিধাবিভক্ত সোশ্যাল মিডিয়ার সিপিএম। একাংশের বক্তব্য, ‘এনাফ ইজ এনাফ! এবার পার্টি কিছু একটা করুক।’ আর একটা অংশের বক্তব্য, ভুল স্বীকার করেই নিয়েছে। তাই আর বিশেষ কড়া ব্যবস্থার পথে হাঁটা উচিত নয়। গোটা বিষয়টি নিয়ে চাপে সিপিএম।
ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক সায়নদীপ মিত্র দ্য ওয়াল-কে টেলিফোনে বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও স্ক্রিনশটের ভিত্তিতে তো আর ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। ওঁর (পড়ুন ঋদ্ধর) সঙ্গে কথা বলা হবে। বিন্দুমাত্র কিছু থাকলে বরদাস্ত করা হবে না।”
August 13, 2020 from Ekhon Somoi
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন